
সাপের কামড়ে প্রতি বছরে রাজ্যের বহু মানুষ মারা যান। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে কেউটে, কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার কামড়ে। কিন্তু ঘটনা হল, এই মুহূর্তে বাকি সাপেদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভেনামে কাজ করলেও, চন্দ্রবোড়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই কাজ হচ্ছে না! ফলে চোখের সামনে কিডনি ফেল করে মারা যাচ্ছেন রোগী। এমনই ভয়াল পরিস্থিতির কথা জানালেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের স্নেক বাইট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার।
তিনি জানাচ্ছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ ভাওয়াল অ্যান্টিভেনাম দেওয়ার কথা। তাতেই কাজ হয়ে যায়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে চন্দ্রবোড়ার কামড়ের চিকিৎসায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাওয়াল লেগে যাচ্ছে। তার পরেও বহু রোগী কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছেন। কেন কাজ করছে না অ্যান্টিভেনাম? দয়ালবন্ধুবাবু জানাচ্ছেন, সর্প-বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সাল থেকে লক্ষ করেন চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনা।
দক্ষিণ ভারতের চন্দ্রবোড়ার অ্যান্টিভেনাম সিরাম এই মুহূর্তে বাংলার কিছু বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের রোগীদের ক্ষেত্রে কাজ করছে না। আর সেই কারণেই যাতে বাংলার সাপের বিষ সংগ্রহ করে বাংলাতেই অ্যান্টিভেনাম সিরাম তৈরি করা যায় তার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন দয়ালবন্ধুবাবুরা। কিন্তু বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে আটকাচ্ছে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরির কাজ। ইতিমধ্যেই অবশ্য পশ্চিম বর্ধমানের জলা থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে বাংলার চন্দ্রবোড়ার বিষ সংগ্রহ করে অ্যান্টিভেনাম সিরাম তৈরির পরিকাঠামো করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদারের কথায়, তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরম জেলার ইরুলা কোঅপারেটিভ সোসাইটির একমাত্র বিষ সংগ্রহ করার অনুমতি রয়েছে। পশ্চিম বাংলায় একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্টিভেনাম সিরাম বানাত। কিন্তু নানা জটিলতায় ২০০৯ সালের পরে তার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
এখন একমাত্র ভরসা দক্ষিণের উপরে। এর পাশাপাশি শুধুমাত্র গবেষণা করার জন্য পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যান্টিভেনাম সিরাম তৈরির জন্য যে পরিমাণ বিষ সংগ্রহের প্রয়োজন, তার কোনও ছাড়পত্র এখনও পর্যন্ত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। আর সে কারণেই আটকে রয়েছে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরির কাজ। চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদারের কথায়, প্রতি বছর ৩০০০ থেকে ৩৫০০ লোক সাপের কামড়ে মারা যান। তার মধ্যে ১০০০ জন চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়েই মারা যাচ্ছেন। মূলত আমাদের দেশে যে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম পাওয়া যায়, সেগুলি হল ঘোড়ার সিরাম। ঘোড়ার শরীরে অল্পমাত্রায় সাপের বিষ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যে ঘোড়ার শরীরে বিষের বিরোধিতা করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই সিরামকেই কাজে লাগানো হয় সাপে-কাটা রোগীদের ক্ষেত্রে।
আমাদের দেশে যে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম তৈরি হয়, তাতে চার রকম সাপের বিষ ব্যবহার করা হয়। এই চার প্রজাতি হল— গোখরো, কালাচাঁদ, চন্দ্রবোড়া, ও ফুঁরশা। যদিও এই ফুঁরশা সাপ পশ্চিম বাংলার কোথাও পাওয়া যায় না। এই পলিভ্যালন্ট অ্যান্টিভেনাম এ দেশের নিরানব্বই শতাংশ বিষধর সাপের কামড়ে চিকিৎসায় কার্যকরী ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে বিষের গঠনগত পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা চন্দ্রবোড়া সাপকে তিনটে শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন— দক্ষিণ ভারত, উত্তর-পশ্চিম ভারত, আর পূর্ব ভারত। এই তিনটি ভৌগোলিক এলাকার চন্দ্রবোড়া সাপের বিষের গঠনগত চরিত্র তিন রকমের। এই কারণে চন্দ্রবোড়া সাপকে নিয়ে রীতিমতো চিন্তা চিকিৎসকদের।
কাজ করছে না চন্দ্রবোড়ার ওষুধ! বাড়ছে প্রাণহানি
Reviewed by aa
on
জুলাই ২৮, ২০১৮
Rating:

কোন মন্তব্য নেই: